মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রুপাকে বরখাস্ত

বগুড়া প্রতিনিধি •

প্রশ্নফাঁসে জড়িত বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে মাহবুবা নাসরিন রুপাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা-১ শাখার স্মারকে সিনিয়র সহকারী সচিব মমতাজ বেগম স্বাক্ষরিত পত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকার প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীনে ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে দুই দফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে জামিনে আছেন। এ ছাড়া বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী জানান, গত ২ জুন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তার সম্মানী ভাতা বন্ধ রয়েছে। জামিন লাভের পর তিনি কয়েকদিন অফিসে এসেছিলেন।

মাহবুবা নাসরিন রুপা জানান, তিনি সাময়িক বরখাস্তের চিঠি পেয়েছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মাহবুবা নাসরিন রুপা নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি গ্রেফতার হন। অভিযোগের বিষয়টি দুর্নীতি, অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাহবুবা নাসরিন রুপা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ভুঁইপুর গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। তিনি ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তার বাবা আতাউর রহমান দীর্ঘদিন ঢাকায় বেসরকারি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করতেন। গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঢাকায় লেখাপড়া করেন।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি হঠাৎ ঢাকা থেকে দুপচাঁচিয়ায় এসে ১৪ দল মনোনীত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে নামেন। ২০১৯ সালের মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার পর এলাকায় তার পরিচিতি বাড়ে। ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়ে তিনি নির্বাচনে মাঠে নামেন। সরকারি দলের পরিচয় দিয়ে বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থীকে ডিঙিয়ে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তার বাবা মারা যান। নির্বাচনে জিতে শপথ গ্রহণের পর উপজেলা পরিষদের প্রথম মিটিংয়ে তিনি উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নির্বাচিত হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে থাকা ছবি দেখিয়ে তিনি এলাকায় প্রভাব সৃষ্টি করেন। তার হস্তক্ষেপে তার মতাদর্শী হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়। রাজনীতিতে অবদান না থাকলেও উচ্চ মহলের চাপে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদ দেওয়া হয়। রুপা এলাকায় ‘হাইব্রিড’ নেতা হিসেবে পরিচিত।

এদিকে, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সেখানে রুপাও ছিলেন। পর দিন ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত প্রত্যেকের দুদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। ২৫ জানুয়ারি রিমান্ড শেষে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন রমনা মডেল থানায় করা মামলায় রুপাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে শুনানির তারিখ ৩০ জানুয়ারি ধার্য করেন। পরদিন তদন্ত কর্মকর্তা রুপাসহ ছয় জনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এই ছয় জনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারের মাসখানেক পর তিনি জামিন পান।

২৩ জানুয়ারি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপরও তিনি দুপচাঁচিয়ায় এলে দাপটের সঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেন।

আরও খবর